logo
প্রকাশ: ০৭:২৬:০০ পিএম, ১১ এপ্রিল ২০১৮
কোটারই দরকার নেই : সংসদে প্রধানমন্ত্রী

বিআর রিপোর্ট

কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারীদের অবরোধে বুধবার রাজধানীর সড়কগুলো অচল হয়ে পড়ে। মানুষ কর্মস্থল আর গন্তব্যে গেছে পায়ে হেঁটে। এরই মধ্যে বিকালে সংসদে কোটা বাতিলের ঘোষণা দিলেন প্রধানমন্ত্রী।

দুদিন আগে আন্দোলনকারীরা সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে বৈঠক করেন। সেখানে এক মাসের জন্য কোটা সংস্কার আন্দোলন বন্ধের ঘোষণা দিলেও পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রীর সুনির্দিষ্ট ঘোষণা ছাড়া কর্মসূচি চালিয়ে যাবার ঘোষণা দেয় তারা।

এ পরিপ্রেক্ষিতে আন্দোলনকারীদের ধৈর্য ধরার পরামর্শ দিয়ে বুধবার সকালে সেতুমন্ত্রী বলেছিলেন, বিকালে সংসদ অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে কথা বলবেন।

সংসদে বিষয়টি ওঠার পর ছাত্র আন্দোলন নিয়ে তার মত প্রকাশ করেন সরকার প্রধান শেখ হাসিনা।

তিনি ছাত্রদের দাবি শুনে বিষয়টি পরীক্ষা-নিরীক্ষার আশ্বাস দেওয়ার পরও আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আন্দোলন যথেষ্ট করেছে, এবার তারা বাড়ি ফিরে যাক।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাড়িতে হামলার ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ জানিয়ে শেখ হাসিনা এতে জড়িতদের শাস্তির কথাও বলেন। তিনি বলেন, যারা ভাংচুর লুটপাটে জড়িত, তাদের বিচার হতে হবে। লুটের মাল কোথায় আছে, তা ছাত্রদেরই বের করে দিতে হবে।

বর্তমানে সরকারি চাকরিতে নিয়োগে ৫৬ শতাংশ পদ বিভিন্ন কোটার জন্য সংরক্ষিত; এর মধ্যে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য ৩০ শতাংশ, নারী ১০ শতাংশ, জেলা ১০ শতাংশ, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ৫ শতাংশ, প্রতিবন্ধী ১ শতাংশ।

কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারী ‘ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ’ কোটার পরিমাণ ১০ শতাংশে কমিয়ে আনার দাবি তুলেছে। তারা কোটায় প্রার্থী পাওয়া না গেল মেধা তালিকা থেকে তা পূরণের দাবিও জানায়।

আন্দোলনকারী এবং তাদের সমর্থনকারী বিভিন্ন শিক্ষকের ‘অজ্ঞতার’ বিষয়টি তুলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাদের যে দাবিনামা, সেটাও স্পষ্ট না। তারা কি এটাও জানে না, কোটায় না পাওয়া গেলে মেধা তালিকা থেকে নেওয়া হয়। এটা তো নেওয়া হচ্ছে।

কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন নিয়ে সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে আলোচনার পর মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানিয়েছিলেন, বিষয়টি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা হবে।

ওই নির্দেশ দেওয়ার বিষয়টি তুলে ধরে তারপরও আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আমাদের মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের তাদের সঙ্গে বসল। আমি কেবিনেট সেক্রেটারিকে বল্লাম, আপনি এটা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন, তাদের দাবিটায় কী করা যায়। অনেকে মেনে নিল, অনেকে মানল না। সারারাত টিএসসিতে তারা থেকে গেল? কেন, এরপরও এই আন্দোলনের যৌক্তিকতা কী থাকতে পারে?

তিনি বলেন, আন্দোলনটা কী, সমস্ত লেখাপড়া বন্ধ করে রাস্তায় বসে যাওয়া। হাসপাতালে মানুষ যেতে পারে না। ঢাকার বাইরে সবাই রাস্তায় নেমে গেছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ আমরাই গড়ে তুলেছি। সেই কাজ গঠনমূলক কাজে ব্যবহার না করে গুজব ছড়ানোর কাজ...  এমনকি মেয়েরা, রাত ১টার সময় হলের গেট ভেঙে মেয়েরা বেরিয়ে পড়ল। মেয়েরা কীভাবে এত রাতে বেরিয়ে এল? আমি চিন্তায় সারারাত ঘুমাতে পারিনি। নানককে (জাহাঙ্গীর কবির নানক) পাঠিয়েছি।

কোটা সংস্কারের দাবির আন্দোলনে নারী শিক্ষার্থীদের অংয়শগ্রহণ এবং জেলায় জেলায় শিক্ষার্থীদের নেমে আসার বিষয়টি তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এরাও চায় না, ওরাও চায় না। ঠিক আছে; কোটাই থাকবে না। কোটার দরকারই নাই। বিসিএসে যাবে, পরীক্ষা হলে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ পাবে।

স্বাধীনতার পর কোটা পদ্ধতি চালুর পর বিভিন্ন সময় তা সংস্কারের বিষয়টি তুলে ধরে তিনি  বলেন, কোটা থাকলেই সংস্কার। না থাকলে সংস্কারের দরকারই নেই। আন্দোলন হলে সময় নষ্ট হবে।

কোটা কেন রাখা হয়, সেই বিষয়টি ব্যাখ্যা করেন শেখ হাসিনা। বলেন, অনগ্রসর জনগোষ্ঠী, পিছিয়ে থাকা জনপদের মানুষদের তুলে আনতে এই কোটা ব্যবস্থা। কোটা তুলে দেওয়ার কথা বলার পাশাপাশি তিনি সংস্কারের সুযোগ থাকার কথাও বলেন। তিনি বলেন, যদি দরকার হয় কেবিনেট সেক্রেটারি তো আছেই।