logo
প্রকাশ: ০৫:২২:০০ পিএম, ০৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯
মিন্নির কথা বলা না বলা ও সুনামের বিরুদ্ধে 'গুজব', দায়ী কে

দেবদুলাল মুন্না

আয়েশা সিদ্দিকা  মিন্নি ছিলো স্বামী রিফাত হত্যা মামলার প্রধান সাক্ষী। এখন স্বামী হত্যার আসামি।  

কেউ বলছেন মিন্নি ‘অপরাধী’ কেউ বলছেন ‘অপরাধীদের’বাঁচানোর জন্যে মিন্নিকে ফাঁসানো হচ্ছে। কিন্তু কেউ এখন আর বলছেন না নয়নবণ্ডকে কেন জীবিত না ধরে মেরে ফেলা হলো! ফ্রানৎ কাফকা’র দ্যা ট্রায়ালের জোসেফ কে. নামের এক নিরপরাধ ব্যাংকারকে একদিন সকালে অজানা এক অপরাধের দায়ে দুজন সরকারি এজেন্ট আকস্মিক গ্রেপ্তার করে বসে ।জোসেফ কে জানে না তার অপরাধ কি? ঠিক সেরকম  যেন নিরীহ কেউ ফেঁসে না যায় এমন আশংকাও রয়েছে জনমনে।  এ লেখার উদ্দেশ্যও  যাতে প্রকৃত আসামীই শাস্তি পায়। নিরীহ কেউ ফেঁসে না যান।এটি জন্মানোর কারণ এই প্রথম আমরা দেখছি জামিনে মুক্ত মিন্নিকে দুটো শর্তের মধ্যে একটি শর্তে বলা হয়েছে মিডিয়ার সাথে কথা বলা যাবে না।এরমানে মিন্নি’র বাক স্বাধীনতা হরণ করা হলো। আরেকটি ব্যাপার মিন্নি যদি কথা বলতে পারতেন তবে হয়ত অনেক কথা জানা যেত। তথ্য গোপন করা মানেই গুজবের জন্ম দেওয়ার কথাটা বহু আগে বলেছিলেন হিটলারের তথ্যমন্ত্রী গোয়েবলস।ফলে মিন্নি চুপ মানে একটি পক্ষ রটাতে পারছে এখনও ‘...ওকে (মিন্নি) নির্যাতন করে স্বীকারোক্তি আদায় করা হলো। কেনো হলো? কারণ একটাই। আর সেটা হচ্ছে তার (এমপি ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু) ছেলে সুনাম দেবনাথ (জেলা আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক), মাদক সম্রাট। ছেলেকে সেভ করার জন্য আমার মেয়ে বলি হয়ে যাচ্ছে।’ (কালের কন্ঠ, ২২ জুলাই ২০১৯)।এখন আমরা  ফেনীর নুসরাত হত্যাকাণ্ডের মামলায় প্রধান আসামী সিরাজ উদ দৌলার পক্ষে স্থানীয় কিছু সাংবাদিককে পক্ষাবলম্ন করতে দেখি। তেমনই এখানে কি সুনাম দেবনাথকে ফাঁসানোর চেষ্টা চলছে?কারণ বরগুনার পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন বলেছেন, ‘মিন্নির পরিকল্পনায় রিফাত শরীফ খুন হন। তিনি আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে সব স্বীকার করেছেন।‘ (যুগান্তর, ২২ জুলাই ২০১৯)।

সেখানে সুনাম দেবনাথ আলোচনায় আসবেন কেন? সেটি পরে বলি। তার আগে একটু এখানকার পরিস্থিতি দেখি।দেখা যাচ্ছে,বরগুনার আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় আয়শা সিদ্দিকা মিন্নিসহ ২৪ জনের বিরুদ্ধে দেয়া চার্জশিট গ্রহণ করেছেন আদালত।গত সোমবার সকালে বরগুনার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম গাজী পুলিশ প্রতিবেদন গ্রহণ করে নথিভুক্ত করেছেন।আয়শাকে জামিন দিয়ে রায় দিয়েছিলেন হাইকোর্ট।  তাঁর জামিন স্থগিত চেয়ে আবেদন করেছিল রাষ্ট্রপক্ষ। রাষ্ট্রপক্ষের এই আবেদনের ওপর শুনানি নিয়ে গতকাল সোমবার চেম্বার বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ‘নো অর্ডার দিয়েছেন। চেম্বার বিচারপতির এই আদেশের ফলে আয়শাকে হাইকোর্টের দেওয়া জামিন বহাল রয়েছে বলে জানান তাঁর (আয়শা) আইনজীবী জেড আই খান পান্না।

জেড আই খান পান্না বলেন, ‘এখন আয়শার কারামুক্তিতে আইনগত কোনো বাধা নেই। আশা করছি, আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া শেষে এক-দুই দিনের মধ্যে আয়শা কারামুক্তি পাবেন।’

এরপর মিন্নি মুক্তিও পেলেন।পুলিশ পাহারায় আছেন। কথা বলতে দেয়া হচ্ছে না। এরমানে আমরা এখনও নিশ্চিত নই মিন্নির পরিণতিতে শেষে কি রয়েছে। তবে এই  ঘটনাকে কেন্দ্র করে দেখা গেল আওয়ামীলীগের মতো বড়ো দলে রয়েছে এখনও রয়েছে ‘ব্লেইম গেম’ খেলার মতো বাস্তবতা।কারণ সেখানকার এমপি দীরেন্দ্রনাথ শম্ভু জনপ্রিয় সংসদ সদস্য।জনপ্রিয় না হলে সংসদ সদস্য হতেন না এটি যে কেউ বুঝবেন। এমনকি তার ছেলে সুনামও যে কোনো অপকর্মের সঙ্গে জড়িত নয় সেটিও বোঝা যায়। কারণ জড়িত থাকলে সাংসদ পিতার ইমেজে কালিমা থাকতো।কিন্তু তবে কারা সুনামকে জড়িয়ে মিথ্যাচার চালাচ্ছেন এ প্রশ্ন জাগতেই পারে। এর কারণ হলো এখন যে কোনো জায়গাতেই দেখা যায় আঙুল ফুলে কলাগাছের মতো রাতরাতি বড়ো লোক হয়ে ওঠা ভুইফোঁড়দেরও এমপি হওয়ার বাসনা জাগে।এমন বাসনা থেকে সুনামকে দিয়ে তার সাংসদ পিতা ও তার ক্লিন ইমেজ ক্ষুন্ন করো তবেই যেনবা কেল্লা ফতে।ফলে ম্যাকিয়াভেলির দ্যা প্রিন্সের সেই বাণীর মতো ‘একটা ঘটনার সাথে আরেকটা ঘটনাকে জড়িয়ে দাও। জাল বিছিয়ে দাও। আটকে যেতে পারে শিকার।’বা গোয়েবলীয় তথ্য ‘একটা মিথ্যা দশবার বললে সত্যে পরিণত হয়’।ফলে সেই কাজটিই কি করতে চাইছে বরগুণার আওয়ামীলীগের একটা নতুন গজিয়ে ওঠা প্রভাবশালী মহল বা কোনো ব্যাক্তিবিশেষ যার পরবর্তী স্বপ্ন ‘এমপি’ হয়ে ওঠা?

আওয়ামীলীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বারবার বলেছেন , দলের ভেতরে একটা মহল ঢুকে পড়েছে যাদের সনাক্ত করতে হবে।’বরগুনার ব্যাপারে আওয়ামীলীগের সিনিয়র নেতাদের একটু খোঁজ নেওয়ার দরকার ‘কেসস্টাডি’ হিসেবে অভ্যন্তরীণ ‘ব্লেমগেম’ হচ্ছে নাতো! ত্যাগী সাংসদ ধীরেন্দ্র দেবনাধ শম্ভু ও সুনাম দেবনাথকে সুস্থ রাজনীতি থেকে ছিটকে ফেলার চেষ্টা করা হচ্ছে নাতো!দলকে সুসংগঠিত রাখতে হলে দল তেকে ‘ভূত’ তাড়ানোর সময় এখনই।

লেখক : সাংবাদিক