
বিআর রিপোর্ট
পরিবার ও বন্ধুবান্ধবদের সাথে পহেলা বৈশাখ উদযাপনে চাই প্রয়োজনীয় কেনাকাটা।
এ জন্য দুই বাচ্চা ও গৃহস্থালি কাজ নিয়ে হিমশিম খাওয়া শারমিন আক্তারকে রাজধানীর অসহনীয় যানজট ডিঙিয়ে মার্কেটে যাওয়ার দরকার থাকলেও তাকে খুব এটা চিন্তিত মনে হচ্ছে না। কারণ, ইন্টারনেট ব্যবহারের সাথে পাল্লা দিয়ে দেশে জনপ্রিয় হতে থাকা 'অনলাইন শপিং' শারমিনকে করেছে ভারমুক্ত।
এভাবেই বাংলাদেশের শহুরে ভোক্তারা তাদের কেনাকাটার ধরন পাল্টে অনলাইন নির্ভর হয়ে পড়ছেন। এতে একদিকে যেমন সময়ের সাশ্রয় হচ্ছে তেমনি ঝামেলা থেকে রেহাই মিলছে বলে মনে করেন রাজধানীর শান্তিনগর এলাকার গৃহবধূ শারমিন।
বাংলাদেশে ১৯৯০'র দশকে ই-কমার্সের যাত্রা শুরু হলেও অনলাইনে অর্থ পরিশোধ ব্যবস্থায় থাকা ঘাটতি এবং ইন্টারনেটের স্বল্প ব্যবহারের কারণে বিষয়টি প্রসার পেতে দেরি হয়। তবে ২০০৯ ও ২০১৩ সালে অবস্থার উল্লেখ্যযোগ্য পরিবর্তন আসে। বাংলাদেশে ব্যাংক দেশে অনলাইন পেমেন্ট সুবিধা চালু করার পাশাপাশি ক্রেতাদের ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে অনলাইনে পণ্য ও সেবা গ্রহণের সুযোগ করে দেয়।সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুককে কেন্দ্র করে অনলাইনভিত্তিক ব্যবসার উদ্যোগগুলো অবিশ্বাস্য রকমের গতি পেয়েছে।
'ক্রেতারা এখন অনলাইনে কেনাকাটার সুফলগুলো পাচ্ছে' বলে মনে করেন আফসানা রহমান। তিনিও বৈশাখের প্রস্তুতির জন্য অনলাইনে কেনাকাটার ওপর নির্ভর করছেন। সব ধরনের পোশাক, গহনা, জুতা কিংবা ঘর সাজানোর জন্য যা কিছু দরকার- এখন সব কিছুই অনলাইনে কিনতে পাওয়া যায়। তবে সচেতনভাবে এবং যাচাই-বাছাইয়ের সা্থে অনলাইন শপিংয়ে অংশ নেয়ার কথা বলেছেন অধিকাংশ ক্রেতা।
'হ্যাঁ, আপনাকে একাধিকবার যাচাই করে নিতে হবে। অনলাইনে কেনাকাটা করে আমার ভালো এবং মন্দ, দুই ধরনের অভিজ্ঞতাই হয়েছে। মানের একটি বিষয় আছে। এখানে গভীরভাবে নজর দেয়া দরকার। তাহলেই এই বর্ধিষ্ণু শিল্পটি টিকে থাকবে।' কথাগুলো আরিফুল ইসলাম নামে এক ক্রেতার।
পহেলা বৈশাখকে সামনে রেখে বড় বড় শপিংমল ও ফ্যাশন হাউজগুলোতে যেমন ক্রেতাদের আনাগোনা বাড়তে থাকে তেমনি অনলাইনে কেনাকাটাও নতুন মাত্রা পায়। সেখানে বিভিন্ন আকারের ইলিশ মাছেরও দেখা পাওয়া যায়। এনআরবি বাজারের ম্যানেজার (অপারেশন) ইউএনবিকে বলেন, 'আমরা মাত্র নয় মাস আগে আমাদের অনলাইন শপিং পোর্টাল চালু করি। কিন্তু যেহেতু মানের ব্যাপারে কোনো ছাড় দেই না তাই আজ ক্রেতাদের শক্তিশালী উপস্থিতি রয়েছে। আমরা ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে পণ্যের সরবরাহ দেই।'
তিনি আরো জানান, বৈশাখকে সামনে রেখে বিক্রির পরিমাণ ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। তারা বিভিন্ন ধরনের পাঁচ হাজারের ওপর পণ্য প্রদর্শন করছেন।
এদিকে, অনলাইনে কেনাকাটা বৃদ্ধি পাওয়ার বিষয়টি মাথায় রেখে দেশের অনেক শীর্ষস্থানীয় ফ্যাশন হাউজগুলোও এই সুবিধা দিচ্ছে। পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে দেশের ফেসবুক নির্ভর ই-কমার্স সাইট ও অনলাইন শপগুলো বিভিন্ন ধরনের প্রচারণা ও ছাড় ঘোষণা করেছে। সেই সাথে সাইটগুলো সাজানো হয়েছে নানা বর্ণিল পণ্যের সমাহারে।
বাংলাদেশি ই-কমার্স শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর মূল সংগঠন 'ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব)' পহেলা বৈশাখ সামনে রেখে ৭-১৩ এপ্রিল পর্যন্ত ই-কমার্স সপ্তাহ পালন করছে।
ই-ক্যাবের সাধারণ সম্পাদক মো. আব্দুল ওয়াহেদ তমাল বলেন, অনলাইন ব্যবসার সাইটগুলো সাধারণত দৈনিক ২০ হাজার অর্ডার পায়। পহেলা বৈশাখের সময় তা বেড়ে ৩০ হাজারে উন্নীত হয়। মূলত এক থেকে দুই হাজারের মধ্যে দাম থাকা পণ্যের অর্ডারই বেশি পাওয়া যায় বলে তিনি জানান।
পণ্যের মান নিশ্চিত করতে নেয়া পদক্ষেপ সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে তমাল ইউএনবিকে বলেন, অনলাইনে কেনা পণ্যের মান নিশ্চিত করতে একটি কাঠামো রয়েছে। 'আমাদের সদস্য হওয়ার জন্য একটি ই-কমার্স সাইটকে যাচাই প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে যেতে হয়। যদি কোনো সাইটের বিরুদ্ধে অভিযোগ আসে তাহলে তাদের মান বজায় রাখার ব্যাপারে সতর্ক করা হয়।'
তিনি জানান, অনলাইন ও ই-কমার্স নীতিমালা নিয়ে তারা একটি খসড়া তৈরি করেছেন। এটি আইসিটি বিভাগের অনুমোদন পেয়েছে। এখন মন্ত্রিপরিষদের অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে।
অনলাইনে কেনাকাটার কিছু প্রতিবন্ধকতা নিয়েও কথা বলেন ই-ক্যাব নেতা তমাল। যার মধ্যে রয়েছে- পণ্যের বিষয়ে মানুষের বিশ্বাসযোগ্যতা এবং সরবরাহ ব্যবস্থায় ঘাটতি থাকা, মূল্য পরিশোধে জটিলতা, বিদেশে সরবরাহে সীমান্ত সমস্যা এবং ওয়েবসাইট পরিচালনার নিরাপত্তা।
পহেলা বৈশাখের কেনাকাটায় প্রচারণার অংশ হিসেবে ৭৭ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় দিচ্ছে daraz.com.bd। সেই সাথে তারা ৩০ মার্চ থেকে ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত বৈশাখী মেলার আয়োজন করেছে। Ajkerdeal.com থেকে বৈশাখী পণ্য কিনলেই পাওয়া যাচ্ছে ৪০০ টাকা পর্যন্ত ক্যাশ ব্যাক। ৪ থেকে ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত মেলার আয়োজন করেছে PriyoShop.com।
অনলাইনে দেশীয় কাপড়ের প্রতিষ্ঠান ঝাঁপি'র মালিক না-শী তানঈর জানান, পহেলা বৈশাখকে সামনে রেখে তিনি তার দোকানে কাপড়ের সংগ্রহ বাড়িয়েছেন। 'বৈশাখ উপলক্ষে আমরা অনেক প্রবাসী বাংলাদেশিদের অর্ডার পেয়েছি। সেসব পণ্য আমরা তাদের আত্মীয়ের বাসায় পৌঁছে দিয়েছি।'