
বিআর রিপোর্ট
বিভিন্ন ব্যাংক নিয়োগ পরীক্ষা, বিসিএস, এইচএসসি ও বিশ্ববিদালয় ভর্তি পরীক্ষায় ডিভাইসের মাধ্যমে উত্তর সরবরাহ করে আসছিল একটি চক্র।
এই চক্রে ব্যাংক কর্মকর্তা, ইঞ্জিনিয়ার থেকে শুরু করে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তারাও জড়িত।
শুক্রবার রাতে অভিযান চালিয়ে পূবালী ব্যাংকের কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম ওরফে সুমন, সোনালী ব্যাংকের কর্মকর্তা অসীম কুমার দাস, কৃষি ব্যাংকের কর্মকর্তা সোহেল আকন্দসহ ১০ জনকে গ্রেফতার করে ডিএমপির গোয়েন্দা ও অপরাধ তথ্য বিভাগ (ডিবি)। গ্রেফতার অন্যরা হলেন- জহিরুল ইসলাম, সাদ্দাতুর রহমান ওরফে সোহান, নাদিমুল ইসলাম, এনামুল হক ওরফে শিশির, শেখ তারিকুজ্জামান, অর্নব চক্রবর্তী ও আরিফুর রহমান ওরফে শাহীন।
শনিবার দুপুরে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এ সব তথ্য জানান ডিবির যুগ্ম কমিশনার আব্দুল বাতেন।
তিনি বলেন, এই চক্রে কেউ ডিভাইস তৈরি করেন, কেউ টার্গেট করে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে চুক্তি করেন, কেউ প্রশ্ন সমাধান করেন। এবার শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এইচএসসি পরীক্ষার প্রশ্নফাঁস ঠেকানো গেছে। এজন্য এই চক্রটি তাদের প্রক্রিয়া বাস্তবায়নের চেষ্টা করছিল।
ডিবি জানায়, ওই তিনজন ব্যাংক কর্মকর্তা সম্প্রতিই ব্যাংকে জালিয়াতির মাধ্যমে নিয়োগ পেয়েছেন। তারপর তারাও এই জালিয়াতি শুরু করেন। এ চক্রটি মূলত বিভিন্ন ব্যাংক নিয়োগ পরীক্ষা, বিসিএস ও বিশ্ববিদালয় ভর্তি পরীক্ষায় প্রতারণা চালিয়ে আসছিল। সম্প্রতি অনার্সের ইংরেজী পরীক্ষায় রাজবাড়িতে জালিয়াতির আশ্রয় নেন এবং এইচএসসি পরীক্ষাতেও এটা শুরুর চেষ্টা করছিলেন তারা। বাংলাদেশ ব্যাংকের এডি আবু জাফর মজুমদার এ চক্রের অন্যতম সদস্য। চক্রটির মূলহোতা পুলকেশ দাস নিজেকে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ব্যাংক কর্মকর্তার পরিচয় দেন। কিন্তু আসলে এই জালিয়াতিই তার একমাত্র কাজ। সে তার বিশ্বস্ত সহযোগী কার্জনের সহযোগিতায় ইলেক্ট্রনিক্স ডিভাসগুলো সংগ্রহ করেন।
চক্রের সদস্যরা দেশের বিভিন্ন স্থানে কর্মরত। নিয়োগ পরীক্ষাগুলো সাধারনত শুক্রবারে হয়। তাই পরীক্ষাকে সামনে রেখে বৃহস্পতিবার তারা ঢাকায় আসেন এবং পান্থপথে একটি রুমে মিলিত হন। পরীক্ষার দিন ওই রুম থেকেই প্রশ্নপত্র সমাধান করে ডিভাইসের মাধ্যমে পরীক্ষার্থীদের উত্তর সরবরাহ করা হয়।
জালিয়াতির প্রক্রিয়া প্রসঙ্গে ডিবির উপ-কমিশনার (ডিসি) মশিউর রহমান বলেন, ক্রেডিট কার্ডের মতো দেখতে একটি ইলেক্ট্রনিক্স ডিভাইস তারা তৈরি করে। এর ভেতরে সিমকার্ড প্রবেশ করানো যায় এবং কল রিসিভ করা যায়। তবে ওই ডিভাইস থেকে কল করা যায়না। পরীক্ষার আগে যেসব পরীক্ষার্থী চুক্তিবদ্ধ হবেন তাদেরকে এই ডিভাইস সরবরাহ করে চক্রটি। এর সঙ্গে ছোট একটি এয়ারফোন থাকে। তারা হলে প্রবেশ করার পর বাইরে থেকে চক্রের সদস্যরা কল করে প্রশ্নের সমাধানগুলো বলতে থাকেন এবং হলে চুক্তিবদ্ধ পরীক্ষার্থীরা এয়ারফোনের মাধ্যমে শুনে উত্তর দিতে থাকেন।
প্রশ্নপত্র কীভাবে ওই চক্রের কাছে যায় জানতে চাইলে তিনি বলেন, অনেক ছাত্র আছে যাদের পরীক্ষা দেওয়ার বয়স আছে, কিন্তু ছাত্র ভালো না। তাদের মধ্য থেকে একজনকে পরীক্ষার্থী হিসেবে হলে প্রবেশ করানো হয়। ডিভাইসের মাধ্যমে বলে বা যে কোনভাবে প্রশ্নটা বাইরে পাঠানোই তার দায়িত্ব। প্রশ্ন পাওয়ার পর কয়েকজন মিলে এর সমাধান করে পরীক্ষার্থীদের উত্তর সরবরাহ করা হতো। পুরো প্রক্রিয়ায় একজন পরীক্ষার্থীর কাছ থেকে দুই থেকে তিন লাখ টাকা নেওয়া হতো।