
আজকাল নারী পুরুষ ভেদাভেদ করা হয় না। সব ক্ষেত্রেই নারী পুরুষকে সমান অধিকার দেয়া হয়।
আজকাল নারী পুরুষ ভেদাভেদ করা হয় না। সব ক্ষেত্রেই নারী পুরুষকে সমান অধিকার দেয়া হয়। কিন্তু এই গল্পটি হলো ১৯৩৬ সালের। যে সময় নারীরা থাকতো চার দেয়ালের মাঝে। সেই সময়টায় উপমহাদেশের নারীদের আকাশ ছোয়া তো দূরের কথা, ঠিকঠাক ভাবে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়াটাও ছিল অসম্ভব।
কিন্তু এই সব ধরণের বাঁধাকে দূর করতে পেরেছিলেন সারলা ঠাকরাল। সেই সময় মাত্র ২১ বছর বয়সে ভারতীয় উপমহাদেশের প্রথম নারী হিসেবে ফ্লাইং লাইসেন্স অর্জন করেন তিনি। এ সময় তিনি একাই জিপসি মথ চালিয়েছিলেন। তার স্বামী পি. ডি. শর্মাও একজন পাইলট ছিলেন এবং শুধু তাই নয়, তিনি ছিলেন উপমহাদেশের প্রথম এয়ারমেইল পাইলট লাইসেন্স অর্জনকারী। তার রুট ছিল করাচি থেকে লাহোর।
সারলার জন্ম ১৯১৪ সালে, অবিভক্ত ভারতের দিল্লীতে। মাত্র ১৬ বছর বয়সে বিয়ের পিঁড়িতে বসেন। ভাগ্য ভাল যে, সারলার স্বামী ও শ্বশুরবাড়ি ছিল আধুনিকমনা। সারলা স্বামীর শতভাগ সমর্থন পেয়ে আকাশ জয়ের স্বপ্নের পেছনে ছোটা শুরু করেন। এক পর্যায়ে লাহোর ফ্লাইং ক্লাব থেকে হাজার ঘণ্টার ফ্লাইং শেষ করে ‘এ’ ক্লাস লাইসেন্সও লাভ করেন।
দুঃখের বিষয় ১৯৩৯ সালে এক প্লেন দুর্ঘটনায় তার স্বামী শর্মা সাহেব মারা যান। শোক সামলে সারলা কমার্শিয়াল পাইলট হবার জন্য আবেদন করার কিছুদিনের মধ্যেই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ডামাডোলে সব বন্ধ হয়ে যায়। দুই মেয়ের দেখভাল এবং জীবিকার তাগিদে তিনি লাহোরের বেঙ্গল স্কুল অব পেইন্টিংয়ে ছবি আঁকা শেখানো শুরু করেন, পাশাপাশি ফাইন আর্টস এর উপর ডিপ্লোমা অর্জনের জন্য পড়ালেখা চালিয়ে যান।
১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পর মেয়েদের নিয়ে জন্মস্থান নয়া দিল্লীতে স্থানান্তরিত হন। ১৯৪৮ সালে আর. পি. ঠাকরালের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। পরবর্তী জীবনে সারলা একজন সফল ব্যবসায়ী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হন। ছবি আঁকার পাশাপাশি তিনি পোশাক ও গহনার ডিজাইন করতেন।
২০০৮ সালের মার্চ মাসে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। বয়স হয়েছিল ৯৪ বছর। বুড়ো বয়সেও তিনি ছিলেন দৃঢ় মানসিকতার অধিকারী। এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘জীবনে সব সময় সুখী ও হাসিখুশি থাকতে পারাটা জানতে হয়। এটাই সবচেয়ে বড় ব্যাপার। আমি জীবনের যেকোনো বিপদে এই কথাটা মাথায় রেখেছি।’
জিপসি মথ বিমানের পাশে শাড়ি পরিহিত অবস্থায় মোহনীয় ভঙ্গীতে দাঁড়িয়ে আছেন – এমন একটা ছবি অনলাইন ঘুটলেই পাওয়া যায়। এটাই যেন উপমহাদেশের সাহসী নারীদে জন্য নজীরসৃষ্টিকারী এক দৃশ্য। দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী ও বৈপ্লবিক নারীর তালিকায় সারলা ঠাকরালের নাম নিঃসন্দেহে প্রথম সারিতে থাকবে।