08:20 AM, 30 May 2019
ব্রিটেনে বাংলাদেশি চিকিৎসকের অনন্য উদ্ভাবন

বিআর রিপোর্ট: ব্রিটেনে বসবাসকারী বাংলাদেশি চিকিৎসক প্রফেসর টিপু আজিজ রোগ নিরাময়ে এক বিশেষ পন্থা উদ্ভাবন করে চিকিৎসায় অনন্য অবদান রেখেছেন। 

ব্রিটেনের ‘অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি হসপিটালস এনএইচএস ফাউন্ডেশন ট্রাস্ট’-এর নিউরো সার্জারির প্রফেসর তিনি।

ব্রিটেনে পারকিনসন্স রোগ যাদের আছে, তাদের কাছে এক পরিচিত মুখ প্রফেসর আজিজ। এরইমধ্যে দু’হাজারের বেশি রোগীর মস্তিষ্কে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে তাদের শারীরিক সক্ষমতা ফিরিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছেন তিনি।

পারকিনসন্স রোগীর চিকিৎসায় ‘ডিপ ব্রেইন স্টিম্যুলেশন’ পন্থা ব্যবহার করেন প্রফেসর আজিজ। তিনি বানরের ওপর গবেষণা করে জেনেছেন যে, মস্তিষ্কের ঠিক কোন অংশে বৈদ্যুতিক স্পন্দন সৃষ্টির মাধ্যমে পারকিনসন্স রোগ নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। তার এই গবেষণার ভিত্তিতে নব্বইয়ের দশকে ব্রিটেনে পারকিনসন্স রোগীদের চিকিৎসায় ব্রেইন পেসমেকার ব্যবহার শুরু হয়।

এই বিষয়ে তিনি বলেন, পারকিনসন্স রোগীরা পাঁচ-ছয় বছর ঔষুধ খাওয়ার পরে নানা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার শিকার হন। কারো কারো শরীরের অনাকাঙ্খিত নড়াচড়া ভালো হওয়ার চেয়ে মোচড়ামুচড়িতে বদলে যায়। তখন তারা বসতে পারে না, নড়তে পারে না। তখন সার্জারি করলে উপকার হয়।

পারকিনসন্স রোগীর হাত-পায়ের কাঁপুনি ও জড়তা রোধে তার মস্তিষ্কের একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলে ‘ইলেক্ট্রোড’ প্রবেশ করানো হয়। আর সেই ‘ইলেক্ট্রোড’ ব্রেইন পেসমেকারের সঙ্গে সংযুক্ত থাকে, যা সাধারণত রোগীর বুকে স্থাপন করা হয়। পেসমেকারটির মাধ্যমে নির্দিষ্ট মাত্রায় মস্তিষ্কে ‘ইলেক্ট্রিক্যাল ইমপাল্স’পাঠানো হয়, যা রোগীর শরীরের কাঁপুনি এবং জড়তা পুরোপুরি দূর করতে সক্ষম। তবে পুরো সার্জারির প্রক্রিয়াটি বেশ জটিল এবং সেটি সম্পন্ন করতে কয়েক ঘণ্টা সময় লাগে। শতকরা সত্তরভাগ ক্ষেত্রে অপারেশন সফল হয়।

শুরুর দিকে ব্যয়বহুল এই চিকিৎসার খরচ ব্রিটেনের রাষ্ট্রীয় স্বাস্থ্য সেবা কর্তৃপক্ষ বহন করতো না। তবে, প্রফেসর আজিজের তদবিরের কারণে এখন সাধারণ রোগীরা সেটা রাষ্ট্রীয় খরচেই করতে পারছেন।

ব্রিটেন ছাড়াও অস্ট্রেলিয়া, সিঙ্গাপুর, ভারতসহ কয়েকটি দেশে পারকিনসন্স রোগের এই চিকিৎসাপদ্ধতি চালু করেছেন প্রফেসর টিপু আজিজ। গোটা বিশ্বে অন্তত আড়াই লাখ রোগী এভাবে চিকিৎসা নিয়েছেন। তবে নিজের মাতৃভূমি বাংলাদেশে এই চিকিৎসা চালু করা তার পক্ষে এখনো সম্ভব হয়নি৷

প্রফেসর আজিজ বলেন, গত বিশ বছর ধরেই চেষ্টা করছি। হঠাৎ করে এই বছর থেকে একটু আঞ্চলিক আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু আগে তো ওঠেনি।

তিনি বলেন, এটার একটা কারণ হতে পারে যে অতীতে বাংলাদেশে এখনকার মতো এতো নিউরোসার্জন ছিল না। তখন জীবন বাঁচানো প্রথম দরকার ছিল। বর্তমানে সেসব জরুরি চিকিৎসার জন্য অনেক চিকিৎসক আছেন। এখন ‘ডিজেনারেটেড ডিজিজ’ – যেসব মানুষকে মারবে না, সেসব সার্জারির চাহিদা এখন ধীরে ধীরে বাড়ছে।

চিকিৎসা বিজ্ঞানে অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ সম্প্রতি নিউরোসার্জারিতে ব্রিটেনের সর্বোচ্চ সম্মাননা ‘সোসাইটি অব ব্রিটিশ নিউরোলজিক্যাল সার্জন্স’ মেডেল পেয়েছেন ড. টিপু আজিজ। অদূর ভবিষ্যতে নিজের মাতৃভূমিতেও পারকিনসন্স রোগের আধুনিক চিকিৎসা পৌঁছে দিতে চান তিনি।

সূত্র: ডয়েচে ভেলে